কৃষক বাবার সন্তান মোহাম্মদ শামি। বড় ক্রিকেটার কী—একবেলা খেয়ে অন্যবেলার চিন্তা করত তার পরিবার। ক্রিকেটের মতো ব্যয়বহুল খেলা তো আকাশকুসুম কল্পনা তার। কিন্তু অদম্য সাহসী ছেলেটির ছিল দুর্দর্শ বোলিং অস্ত্র। ‘রাজনীতির কারণে’ শিকার হয়ে জায়গা হয়নি নিজ রাজ্য উত্তর প্রদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।
কিন্তু শামি তো অদম্য। তার স্বপ্নকে কী এত সহজেই শেষ করে দেওয়া যায়! পরিবার-স্বজন ছেড়ে শৈশবের কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকের পরামর্শে চলে যান পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু এখানে থাকার ঘর নেই; খাওয়ার টাকা নেই। ট্রায়ালে ছোট্ট শামির প্রতিভা দেখে নিজ বাড়িতেই থাকার সুযোগ করে দেন তখনকার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সচিব দেবব্রত দাস।
এরপর তো বদলে যাওয়া শুরু। ২০১০ সালে সৌরভ গাঙ্গুলিকে নেটে বোলিংয়ের সুযোগ হয়। দারুণ এক বাউন্সার দিয়ে চমকে দেন তিনি। সৌরভের চাওয়াতেই জায়গা হয় পশ্চিমবঙ্গ দলে। তিন বছর পরই ১৩০ কোটির ভারতীয় দলের ১১তম ক্রিকেটার হন শামি।
২০১৫ বিশ্বকাপে পা খুড়িয়ে ভারতকে সেমিতে তুলেছিলেন। পরের বছর ইনজুরি। ফেরার পর বেশিদিন থাকা হয়নি। ২০১৮ সালে স্ত্রীর অভিযোগে বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার সুযোগ পেয়েই করেন হ্যাটট্রিক। আবার বিশ্রাম নামের কালো থাবায় পড়েন তিনি। হতাশাগ্রস্ত শামির প্রিয় মেন্টর বদরুদ্দিন সিদ্দিকি একবার বলেছিলেন, ‘শুধু সংসার চালানোর জন্য অর্থ রোজগার করে লাভ নেই। উপার্জন করা অর্থ নিজের উন্নতির জন্যও খরচ করতে হয়।’ শামি বদলে যান! কিন্তু আবারও সেই বেঞ্চে বসা সময়ের শুরু। বিশ্বকাপের শুরুতে দলে জায়গা হয়নি তার।
বাংলাদেশ ম্যাচে হার্দিক পান্ডিয়া চোটে পড়লে পরের ম্যাচে সুযোগ পেয়ে যান তিনি। এরপর তিনবার পাঁচ উইকেট নিলেন, একবার নিলেন চার। এভাবেই উড়ছে শামির অদম্য পতাকা।