কেমন ছিল বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক একাদশ

২০০০ সালের ১০ ই নভেম্বর। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরনীয় দিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের টেস্ট অভিষেকের দিন। ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। টেস্ট ক্রিকেটের ১৫১২ তম টেস্ট ছিল সেই ম্যাচটি। টসে জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলামের ১৪৫ রানের অসাধারন ইনিংসের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করে। যদিও ম্যাচটি ৯ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। সুনীশ জোশী তার অলরাউন্ডার পারফর্মেন্সের জন্য ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।

আজকে আমাদের আয়োজনে থাকবে অভিষেক টেস্টে খেলা বাংলাদেশ একাদশ নিয়ে।

মোহাম্মদ শাহরিয়ার হোসাইন বিদ্যুত: 

বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক ম্যাচে খেলা এই ওপেনারের ক্যারিয়ার অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। এই ম্যাচ সহ মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন টেস্ট। তিন টেস্টে করেছেন ৯৯ রান, সর্বোচ্চ ৪৮ রান আর এভারেজ ছিল প্রায় ২০। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪ টি চার মেরেছেন, কোন ছয় মারতে পারেন নি তিনি। ছিল না কোন অর্ধ শতক।

ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের হয়ে তিনি খেলেছেন ২০ টি ম্যাচ। দুই অর্ধশতকের মাধ্যমে করেছেন ৩৬২ রান। ক্যারিয়ার সেরা ৯৫ রানের ইনিংসটি খেলেছেন কেনিয়ার বিপক্ষে। এভারেজ প্রায় ১৯। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোন শতক না থাকলেও প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে তার ৯ টি শতক রয়েছে। 

মেহরাব হোসাইন (অপি)ঃ 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসাইন। ১৯৯৯ সালের জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তার ১০১ রান বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোন আন্তর্জাতিক শতক। তার কাকা আজহার হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম ফিফটি করা খেলোয়াড়। ২০০৩ সালে অবসর নেওয়ার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক অংশ হয়ে রয়েছেন এই ক্রিকেটার। 

ক্যারিয়ারে তিনি ৯ টি টেস্ট খেলে করেছেন ২৪১ রান। যার মধ্যে আছে ১ টি অর্ধশতক (৭১) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টেস্টে কোন ছয় না মারতে পারলেও তিনি ২৬ টি চার হাকিয়েছেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার এভারেজ ছিল ১৩.৩৮। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন ১৮ টি ম্যাচ যেখানে একটি শতক ও দুইটি অর্ধশতকের মাধ্যমে ৪৪৯ রান করেছেন। সর্বোচ্চ ১০১। গড় প্রায় ২৫ এর ঘরে। 

কাজি হাবিবুল বাশার (সুমন)ঃ 

অভিষেক টেস্টে খেলে এরপর ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্টার হয়েছেন যে কয়জন ক্রিকেটার তার মধ্যে সুমন একজন। বর্তমানেও তিনি ক্রিকেটের সাথেই আছেন। ক্যারিয়ারে ৫০ টেস্ট খেলে তিনি করেছেন ৩০২৬ রান। যা গড় প্রায় ৩১। রয়েছে ৩ টি শতক ও ২৪ টি অর্ধ শতক। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন ১১১ টি ম্যাচ, প্রায় ২২ গড়ে করেছেন ২১৬৮ রান। কোন শতক না থাকলেও করেছেন ১৪ টি অর্ধশতক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পেয়েছেন কিংবদন্তী ব্রায়ান লারার উইকেট যা তার ক্যারিয়ারের একমাত্র উইকেট। 

মি. ফিফটিঃ হাবিবুল বাশার সুমন

মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (বুলবুল)ঃ 

বাংলাদেশ টেস্টের অভিষেক ম্যাচের নায়ক। বাংলাদেশ টেস্টের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। টেস্ট যুগ আগের বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড় তিনি। তার ক্যারিয়ারে তিনি ১৩ টি টেস্ট খেলেছেন। প্রায় ২২ গড়ে করেছেন ৫৩০ রান যার মধ্যে রয়েছে একটি শতক ও দুইটি অর্ধশতক। সর্বোচ্চ ১৪৫ যেটা তিনি অভিষেক টেস্টে করেছেন। কোন ছয় না মারতে পারলেও চার মেরেছেন ৫০ টি। টেস্টে ক্রিকেটে বল হাতেও নিয়েছেন একটি উইকেট। 

ওয়ানডে তিনি ৩৯ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে প্রায় ২৪ গড়ে করেছেন ৭৯৪ রান। নেই কোন শতক তবে অর্ধশতক করেছেন তিনটি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ রান। ২ টি ছয় ও ১৩ টি চার মেরেছেন ক্যারিয়ারে। অয়ানডে তিনি ৭ টি উইকেট নেন। সেরা বোলিং ৫৭ রানে ৩ উইকেট। 

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন খানঃ 

তামিম ইকবাল, নাফিস ইকবাল এর কাকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম সদস্য আকরাম খান। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী আকরাম খান বর্তমানেও কাজ করছেন ক্রিকেট বোর্ডে। অভিষেক টেস্ট সহ তিনি বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছেন মোট ৮ টি টেস্ট। সেখানে তিনি প্রায় ১৬ গড়ে করেছেন ২৫৯ রান। কোন শতক ও অর্ধশতক নাই তার ক্যারিয়ারে। সর্বোচ্চ রান করেছেন ৪৪। ২৯ টি চার ও ৩ টি ছয় হাকিয়েছেন। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি ছিলেন আরো সমৃদ্ধ। খেলেছেন ৪৪ টি একদিনের ম্যাচ। প্রায় ২৪ গড়ে করেছেন ৯৭৬ রান । ওয়ানডে তার ঝুড়িতে আছে ৫ টি অর্ধশতক। 

মোহাম্মদ আল শাহরিয়ারঃ 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম ফার্স্টক্লাস শতক করা ব্যাটার ছিলেন আল শাহরিয়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে নিয়মিত দেখা না গেলেও তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার ছিলেন। ক্যারিয়ারে ১৫ টেস্ট খেলা শাহরিয়ার প্রায় ২৩ গড়ে করেছেন ৬৮৩ রান। আছে ৪ টি অর্ধশতক। সর্বোচ্চ স্কোর ৭১ রান। ৯৯ টি চার এবং ৪ টি ছয়ে মেরেছেন ক্যারিয়ারে। 

ওয়ানডে ২৯ টি ম্যাচ খেলেছেন করেছেন ৩৭৪ রান। গড় প্রায় ১৪। আছে দুইটি অর্ধশতক। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬২ রান। 

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন অসাধরন পারফর্মার। ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটে ৬৮ ম্যাচে করেছেন ৩৫৯৬ রান। শতক ৪ টি ও অর্ধশতক ২৪ টি।  

নাইমুর রহমান দুর্জয় (অধিনায়ক)ঃ 

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক দুর্জয়। তার অধিনায়কত্ব ছিল ৮ ম্যাচ। এই ৮ ম্যাচই তিনি টেস্ট খেলেছেন। ১৫ গড়ে করেন ২১০ রান। ছিল না কোন অর্ধশত বা শতক। সর্বোচ্চ রান করেন ৪৮। ক্যারিয়ারে কোন ৬ মারতে না পারলেও ৩১ টি ৪ মেরেছেন। বল হাতে ৮ টেস্টে নিয়েছেন ১২ উইকেট। ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট শিকার করেছেন ১ বার। সেরা বোলিং ফিগার ১৩২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট। 

ওডিআই খেলেছেন ২৯ টি। প্রায় ২০ গড়ে করেছেন ৪৮৮ রান। ছিল না কোন শতক বা অর্ধশতক। সর্বোচ্চ রান ৪৭। ৪ মেরেছেন ৪২ টি ৬ মেরেছেন ৫ টি।  বল হাতে টেস্টের মত উজ্জ্বল ছিলেন না। ক্যারিয়ারে ২৯ ম্যাচে পেয়েছেন ১০ উইকেট। সেরা বোলিং ৫১ রানে ২ উইকেট।  

খালেদ মাসুদ পাইলটঃ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম দশকের সেরা উইকেট কিপার। তার ফিটনেস ছিল সেরাদের কাতারে। বর্তমান অনেক ক্রিকেটারের ফিটনেস তার কাছেও ছিল না। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে কেনিয়ার বিপক্ষে নং অনে ৬ মেরে সবার নজরে আসেন। 

ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৪৪ টেস্ট। প্রায় ১৯ গড়ে করেন ১৪০৯ রান। একটি শতক ও ৩ টি অর্ধশতক করেন। ১৪৭ টি চার ও ১ টি ছয় মারেন। ক্যাচ ধরেছেন ৭৮ টি স্ট্যাম্পিং করেছেন ৯ টি। 

১২৬ ওডিআই খেলে এই ব্যাটার করেন ১৮১৮ রান, গড় প্রায় ২২। কোন শতক না থাকলেও আছে ৭ টি অর্ধশতকের ইনিংস। ক্যাচ ধরেছেন ৯১ টি আর স্ট্যাম্পিং ৩৫। সর্বোচ্চ স্কোর অপরাজিত ৭১। 

মোহাম্মদ রফিকঃ

ইন্ডিয়ান বিদ্রোহী লীগ আইসিএল এ যোগ দিয়ে যে কয়জন খেলোয়াড় বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তার মধ্যে মোহাম্মদ রফিক অন্যতম। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিও তিনি নিজ দেশের হয়ে খেলতে পারেন নি। খেলেছেন এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে। প্রথম টেস্ট একাদশের মধ্যে একমাত্র রফিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন।

ক্যারিয়ারে ৩৩ টি টেস্ট খেলে করেছেন ১০৫৯ রান। আছে একটি শতক ও ৪ টি অর্ধশতক। চার মেরেছেন ১১০ টি ছয় মেরেছেন ৩৪ টি। এর পাশাপাশি আছে ১০০ টি উইকেট। ৫ উইকেট শিকার করেছেন ৭ বার। ইনিংস সেরা বোলিং ৭৭ রানে ৬ উইকেট। 

ওয়ানডে ক্রিকেটেও ছিলেন দলের গুরুত্বপূর্ন সদস্য। খেলেছেন ১২৫ টি ম্যাচ। প্রায় ১৪ গড়ে করেছেন ১১৯১ রান। আছে ২ টি অর্ধশতক। ১১০ টি চার আর ২৯ টি ছয় মেরেছেন। উইকেট নিয়েছেন ১২৫ টি উইকেট। ৪৭ রানে ৫ উইকেট ছিল তার ক্যারিয়ারের একমাত্র ৫ উইকেট। 

একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে ২৬০ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১৩ রান। এবং বল হাতে নিয়েছেন ২২ রানে এক উইকেট। 

কিংবদন্তি মোহাম্মদ রফিক

 মোহাম্মদ হাসিবুল হোসাইন শান্তঃ

১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশ দলের একমাত্র পেস ভরসা ছিলেন শান্ত। তার বলে ছিল অনেক ভ্যারিয়েশন কিন্তু ল্যান্ডিং এর সমস্যার ছিল অনেক। ক্যারিয়ারে মোট ৫ টি টেস্ট খেলেছেন তিনি এর মধ্যে নিয়েছেন ৬ টি উইকেট। ইনিংস সেরা বোলিং ১২৫ রানে দুই উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন ৯৭ রান।

ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন মোট ৩২ টি। এই ম্যাচে ২৯ টি উইকেট অর্জন করেছেন। ইনিংস সেরা বোলিং ফিগার ৫৬ রানে ৪ উইকেট। ব্যাট হাতেও কার্যকরি কিছু ইনিংস খেলেছেন। তিনি মোট ১৭২ রান করেন। সেরা ব্যাটিং অপরাজিত ২১ রান। 

বিকাশ রঞ্জন দাসঃ 

পরবর্তীতে ধর্ম পরিবর্তন করে নাম রাখেন মাহমুদুর রহমান। এই বা হাতি পেসার ক্যারিয়ারে শুধু এই টেস্ট খেলেছেন। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের অফ ফর্মের কারন দল থেকে বাদ পড়ে ক্যারিয়ারটা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারেন নি। ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট একটি উইকেট লাভ করেন। ক্যারিয়ার সেরাও সেই ৭২ রান খরচায় একমাত্র উইকেট টি। ব্যাট হাতে করেন ২ রান। 

ক্যারিয়ারে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয় নি বিকাশের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top